ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৭/১০/২০২৪ ১১:১৭ এএম


কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চলছে প্রকাশ্যে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। সচেতন মহল বলছেন, ব্যাপক ভূমিধসের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। অন্যদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, অতীতে পাহাড়ধসে উখিয়ার রাজাপালং পূর্ব ডিগলিয়া ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য স্থানে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি অবৈধভাবে পাহাড় কাটতে গিয়ে পাহাড়ধসে রাজাপালং মহুরি পাড়ায় ৩ রোহিঙ্গা নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। তারপরও থামছে না পাহাড় কাটা।

সরেজমিনে গেলে দেখা মিলে, রাজাপালং, জালিয়াপালং, পালংখালী, হলদিয়াপালং, রত্নাপালং সহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় নিধনে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। একটি মহল পাহাড় কেটে ট্রাক, ডাম্পার ও ট্রাক্টর বোঝাই করে মাটি বিক্রি করছে। এই মাটি ইটভাটা, কৃষি জমি ভরাট, ভূমিদস্যুদের অবৈধ জায়গা দখল ও পুকুর ভরাটসহ নানা কাজে এ মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, বিট অফিসার সৈয়দ আলম স্থানীয় হওয়ার প্রভাব দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই রেঞ্জে কর্মরত আছেন। চিহ্নিত পাহাড় খেকো, বালি উত্তোলন, জবর দখলকারীসহ বিভিন্ন সিন্ডিকেটের সাথে টাকার বিনিময়ে আঁতাত করে এমন কর্মকান্ড করতে সরাসরি সহযোগিতা করেন। এমন কি তিনি টাকা বিনিময়ে রাত-দিন পাহাড় কাটার জন্য সহযোগীতা করেন। তিনি আরো বলেন, রেঞ্জ কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে এই রেঞ্জ লুটপাট করে খাচ্ছে। তার বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে কোন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোন ব্যবস্থা নিতে অনিহা বোধ করেন রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম। বিট কর্মকর্তা সৈয়দ আলম গত ৪-৫ মাস আগে উখিয়া রেঞ্জের হলদিয়া বিটে দায়িত্বে ছিলেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে এখন ভালুকিয়া বিটে দায়িত্বে আসার পরেও থেমে নেই। পাহাড় খেকোদের কাজ থেকে টাকা নিয়ে পাহাড় কাটার জন্য সরাসরি সহযোগিতা করেন এমনও অভিযোগের শেষ নেই।

সুত্রে জানা গেছে, উখিয়া পালংখালীতে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দুইটি খাল থেকে ইজারাবিহীন বালি উত্তোলন করছে প্রভাবশালী একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মামলা জরিমানা কিছুই দমাতে পারছেনা এসব প্রভাবশালীদের। ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে খালের তীব্র ভাঙনের পাশাপাশি পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নে ২টি বৃহৎ বালি মহাল রয়েছে। তারমধ্যে পালংখালী খালের বালুমহাল ও বালুখালী খালের বালি মহাল অন্যতম।

উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আইনি জটিলতার কারণে পালংখালী ইউনিয়নের খালের বালি মহালটি সরকারিভাবে নিলাম বা ইজারা বন্ধ রয়েছে।প্রশাসন বলছেন, বেআইনিভাবে কোন খাল থেকে বালি উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই।

সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে পালংখালী খালের বালি মহালটি ইজারা নেয় স্থানীয় আলী আহমদ নামের এক ব্যক্তি। নিয়ম অনুযায়ী গত জুলাই মাসে তার ইজারার মেয়াদ শেষ হয়।

এরই মধ্যে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খাল দুইটি দখলে নেয় স্থানীয় একটি শক্তিশালী বালি সিন্ডিকেট। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালি উত্তোলনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে তারা।

স্থানীয় সূত্র মতে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন চৌধুরী, যুবদল নেতা শাহ আলম ও হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে খালের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করছে। যা জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির মুখে। বালি সিন্ডিকেটটি পালংখালী খালের বিভিন্ন পয়েন্টে চারটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাত-দিন অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করতে দেখা গেছে।

এসব নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনায় আসার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামে মাত্র অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় একটি অবৈধ ড্রেজার মেশিন জব্দ করে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ।
উখিয়ার পালংখালী ও বালুখালী খাল এবং বনবিভাগের পাহাড়ে চলছে আরও ৫ টিরও অধিক ড্রেজার মেশিন। রাতের বেলায় ড্রেজার মেশিনের শব্দে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে স্থানীয়রা। এককথায় অবৈধ ড্রেজার মেশিনের শব্দে আশেপাশের ঘর-বাড়িতে ঘুমাতে পারে না নারী পুরুষ ও শিশুরা।
অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত সাহাব উদ্দিন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কথা সরাসরি অস্বীকার করেন।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের জন্য সরকার কোন খাল ইজারা দেয়নি। তাই যে বা যারা অবৈধভাবে বালি উত্তোলন ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত এবং জীববৈচিত্র ধ্বংস করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের দুইটি খালে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ও পাহাড় কেটে প্রতিদিন ডাম্পার যোগে মাটি ও বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। পরে তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। তাই এখনই এসব অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ করেন।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম বিট অফিসার সৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা শিকার করে জানান, তিনি এই এলাকার মানুষ এবং তার বয়সও হয়েছে কি করা যায়…? তাই একটু চুপ থাকি। তার পরেও দেখি কি ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হয় প্রতিবেদকের। তিনি জানান, চলতি বছরের জন্য পালংখালী ইউনিয়নের কোন খাল বা বালি মহাল সরকারের পক্ষ থেকে ইজারা দেয়া হয়নি। তাই বালি উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। যারা ইজারাবিহীন বালি উত্তোলন ও পাহাড় কাঁটার সাথে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, গেল কয়েক মাস আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছিলো- “বিট অফিসার সৈয়দ আলম ও খোকনের সিন্ডিকেটে চলছে পাহাড় কাঁটার মহোৎসব” উক্ত প্রকাশিত সংবাদটি কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের নজরে আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তাকে (ডিএফও) কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য চিঠি ইস্যু করেন। সুত্রে জানা গেছে এরকম তার বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ থাকার পরেও উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা বিট অফিসার সৈয়দ আলমের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে দেখা যায় না। সূত্র সিএনসি

পাঠকের মতামত

ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ৬

নরসিংদীর শিবপুরে ট্রাক-সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে ...

টেকনাফের দুই কিশোরকে আরাকান আর্মি থেকে ফেরত আনলো বিজিবি

মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি’র হাতে আটক কক্সবাজারের টেকনাফের দুই কিশোরকে ফিরিয়ে এনেছে বর্ডার ...